রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা | NCTB BOOK

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার:

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলতে সেই সরকারকে বোঝায় যেখানে শাসন বিভাগ তার কাজের জন্য আইন বিভাগের নিকট দায়ী থাকে না । রাষ্ট্রপতি তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন । রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার সদস্যগণ আইনসভার সদস্য নন। মন্ত্রীগণ তাদের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী থাকেন । রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির উপর মন্ত্রীদের কার্যকাল নির্ভর করে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । তিনিই প্রকৃত শাসক ও সরকারপ্রধান। তিনি কোনো কাজে মন্ত্রীদের পরামর্শ গ্রহণ করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রচলিত রয়েছে।

 

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের গুণ:

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের গুণাবলি নিম্নরূপ :

১. স্থিতিশীল শাসন: রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি একটি নির্ধারিত মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। এ সময় একমাত্র অভিশংসন (কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইন সভার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন সাপেক্ষে অপসারণ করা) ছাড়া তাকে অপসারণ করা যায় না । ফলে শাসন ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকে ।

২. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: এ ব্যবস্থায় আইন বিভাগের সাথে পরামর্শ না করে রাষ্ট্রপতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন । ফলে যুদ্ধ, জরুরি অবস্থা ও অন্য কোনো সংকটকালে সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পারদর্শিতার পরিচয় দেয়।

 

৩. দক্ষ শাসনব্যবস্থা: এতে রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীগণকে আইন প্রণয়ন নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হয় না এবং তারা আইন পরিষদের কাছে দায়ী নন। ফলে তারা প্রশাসনিক বিষয়ে বেশি সময় দিতে পারেন, যা প্রশাসনকে দক্ষ করে তোলে ।

 

৪. ক্ষমতার স্বাতন্ত্রীকরণ: এই শাসন ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগ (শাসন, আইন ও বিচার বিভাগ) পৃথকভাবে কাজ করে, আবার অন্যদিকে একটি অন্যটির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে । ফলে এতে ক্ষমতার পৃথকীকরণ ও ভারসাম্য বজায় থাকে ।

 

৫. দলীয় মনোভাবের কম প্রতিফলন : আইন সভায় বিল পাসের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ভোটাভুটি সরকারের স্থায়িত্বের উপর প্রভাব ফেলে না । ফলে এ ব্যবস্থায় দলীয় মনোভাব কম প্রদর্শিত হয় । রাষ্ট্রপতি দলের চেয়ে জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করাকে অধিকতর গুরুত্ব দেন ।

 

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ত্রুটি:

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ত্রুটি নিম্নরূপ :

১. স্বেচ্ছাচারী শাসন : রাষ্ট্রপতির হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব থাকায় এবং শাসন বিভাগ তার কাজের জন্য আইন বিভাগের নিকট দায়ী না থাকায় রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাচারী শাসকে পরিণত হতে পারেন। যেহেতু তিনি কারও সাথে পরামর্শ করতে বাধ্য নন, সেহেতু খামখেয়ালী ও দায়িত্বহীন শাসনের আশঙ্কা এতে বেশি থাকে ।

২. বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্কের অভাব: শাসন, আইন ও বিচার বিভাগের গঠন ও ক্ষমতা আলাদা হওয়ায় পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতার অভাব ও বৈরিতা দেখা দেয়। এ ধরনের পরিস্থিতি সরকারকে নাজুক অবস্থায় ফেলতে পারে ।

৩. অনমনীয় শাসন: রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে সহজে সংবিধান সংশোধন করা যায় না। ফলে শাসনব্যবস্থা অনমনীয় প্রকৃতির হয়। কোথাও কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা সহজে করা যায় না । আবার রাষ্ট্রপতিকে সহজে পদচ্যুত করা যায় না। ফলে সহজে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটানো যায় না ।

অতএব, আমরা রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরন ও এদের দোষ ও গুণ সম্পর্কে জানলাম । পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা কেবল একটি পদ্ধতিকে ধারণ করে না। বরং একাধিক পদ্ধতির সংমিশ্রণে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে । যেমন- আমেরিকা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । এখানে রয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসিত ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা। যুক্তরাজ্যে রয়েছে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র । রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, জনগণের প্রত্যাশা, বাস্তব পরিস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণেই এই বিভিন্নতা গড়ে উঠে

Promotion